সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৬

ইমাম শাফেয়ী রহ. এর অমিয় বানী

ইমাম শাফেয়ী রহ. এর অমিয় বানী

১.ইমাম শাফয়ী রহ. এর বংশ ধারাবাহিকতা ।
আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইদরীস ইবনুল আব্বাস ইবনে উসমান ইবনে শাফি’ ইবনুস সায়েব ইবনে উবাইদ ইবনে আবদ ইয়াজিদ ইবনে হাশেম ইবনুল মুত্তালিব ইবনে আব্দুল মানাফ ।
আবদে মানাফের সূত্র ধরে ইমাম শাফেয়ীী রহ. এর বংশধারা গিয়ে রসুল স. এর সাথে মিলিত হয় ।
ফায়দা : মুত্তালিব ও হাশেম এরা উভয় ছিলেন আবদে মানাফ এর সন্তান ।তাঁরা উভয়ে পরষ্পর আপন রক্তেরভাই ছিলেন । হাশেম মদীনার এক নারীকে বিবাহ করেন ।তার ঘর থেকে একটি সন্তান জন্ম নিল সেই বাচ্চার নাম রাখা হলো “শাইবাতুল হামদ”।এই বাচ্চাটিই অবশেষে আব্দুল মুত্তালিব নামে খ্যাতি লাভ করেছে এবং তিনিই ছিলেন রসুল স. এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব ।
যার মূল ঘটানা হলো এ রূপ যে , হাশেম ব্যবসার উদ্যেশ্যে সিরিয়ায় যান এবং সেখানেই ইন্তিকাল করেন । হাশেমের ভাই মুত্তালিবের এই চিন্তা আসে যে, আমার ভাতিজা “শাইবাতুল হামদ” মদীনা মুনাওয়ারায় রয়েছে ।তাকে মক্কা মুকাররমায় নিয়ে আসব যাতে নিজ খান্দানে তার লালন পালন হয় । শাইবাতুল হামদ তখন সমঝদার বালক । তাই তার মা তাকে চাচার সাথে পাঠিয়ে দেন । এই মুত্তালিব যখন নিজ ভাতিজা “শাইবাতুল হামদ” কে নিজের সওয়ারির পেছনে বসিয়ে মক্কায় নিয়ে আসেন তখন কেও কেও বলে উঠল এটি আব্দুল মুত্তালিব অর্থাত মুত্তালিবের দাশ । এভাবেই তার এই নাম প্রসিদ্ধ হয়ে পড়ে আর কেও কেও বলেছে মুত্তালিব যেহেতু নিজের ভাতিজা “শাইবাতুল হামদ” কে লালন পালন করছেন তাই তার প্রতি তার অনুগ্রহের কারণে তাকে “আব্দুল মুত্তালিব” বলা হতো কারণ জাহেলিয়াত যুগে এধরনের লালন পালনের ক্ষেত্রে এই উপাধিই প্রসিদ্ধ ছিল ।
টীকা: এখান থেকে নিয়ে সবগুলো বিষয় ও বানী আল্লামা হাফেজ ইবনে হাযার আসকালানী রহ. এর কিতাব “তাওয়ালাত তাসীস লি মাআলী মুহাম্মদ আবনে ইদরীস” থেকে গৃহিত ।
২.ইমাম শাফী রহ.১৫০ হিজরীতে [৭৬৭ ঈসায়ী] মিসরের আসকালান অঞ্চলের ‘গুজ্জা’ নামক এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । [১৫০ সেই ঐতিহাসিক হিজরী সাল, যে সালে ইমাম আবু হানীফা রহ. ইন্তেকাল করেছিলেন । দুই বছর বয়সেই তার মাতা তাকে তার আসল খান্দান মক্কা মুকাররমায় নিয়ে আসেন । যেখান থেকে তিনি ইলমে দ্বীন হাসিল করতে শুরু করেন । সতের বছর বয়সে তিনি হুযাইল ও আরবের বিভিন্ন গোত্রের নিকট যান যেন তাদের কাছ থেকে আরবী ভাষার গভীর পাণ্ডিত্য হাসিল করতে পারেন । ১৭০ হিজরীতে তিনি ইমাম মালেক রহ. এর কাছ থেকে শিক্ষা-দ্বীক্ষা লাভ করেন । ১৮০ হিজরীর শুরুতে তিনি ইয়ামান সফর করেন । এরপর ইরাক গিয়ে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর বিশেষ শাগরিদ ইমাম মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানীর নিকট ইলম অর্জন করেন। সেখান থেকে মিসর চলে যান। যেখানে মানুষ ইমাম শাফেয়ী রহ.- এর ইলম ও ফেকাহ কে ব্যাপক ভাবে গ্রহণ করে । ১৯৭ হিজরীতে আবার বাগদাদ ফিরে আসেন । এখানে এক বছর থাকার পর ১৯৮ হিজরীতে আবার মিসরে ফিরে যান । এক বছর পর আপন দেশ মক্কা মুকার্রমায় সফর করেন । এরপর ১৯৯ হিজরীতে মিসর ফিরে এসে এখানে থাকতে শুরু করেন । এভাবে ২০৪ হিজরীতে [৮২০ ঈসায়ী] মিসরেই এই সূর্য অস্তমিত হয়ে যায় ।
৩.ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, আমি সাত বছর বয়সেই কুরআন মাযীদ মুখস্ত করে নিয়েছিলাম আর দশ বছর বয়সে মুয়াত্তা মুখস্থ করে ফেলেছিলাম ।
৪. ইমাম সাহেব বলেন , বাচ্চা বয়সে যদি উস্তাদ কাউকে কোন শব্দ মুখস্থ করাতেন তাহলে তা আমার মুখস্ত হয়ে যেত । বালক হওয়ার পর আমি বেদুইন এলাকায় গিয়েছি । সেখানের হুযাইল গোত্রে আমি তিন বছরে আরবি ভাষা ও সাহিত্য শিখেছি । [ কুরআন হাদীসের অর্থ ও ব্যাখ্যা যথযথভাবে বুঝার জন্য আরবি ভাষা ও সাহিত্যে দক্ষতা অর্জন করা কত জরুরী বিষয় ইমাম সাহেবের এই উক্তি থেকে তা অনুমান করা যায়। নিজে আরবের কুরাইশ বংশের লোক হওয়া সত্ত্বেও তিনি কত গুরুত্বের সাথে এই ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছেন ।] ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশ-শাইবানী রহ. বলেন, আমি উত্তরাধিকার সূত্রে ত্রিশ হাজার দীনার পেয়েছিলাম যার অর্ধেক আমি খরচ করি আরবী ভাষা ও কাব্য শেখার পেছনে । আর বাকি অর্ধেক ব্যয় করি হাদীস ও ফেকাহ শেখার পেছনে । (বুলুগুল আমানী [শায়েখ মুহাম্মদ যাহেদ কাউসারী],পৃ:৬)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন